Noteboibd

مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ۚ

🕋 কুরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য: আত্মত্যাগের প্রকৃত পাঠ​

কুরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য

“তোমরা তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও। যখন তারা উভয়ে কুরবানি পেশ করল, তখন একজনের কুরবানি কবুল হলো, অপরজনেরটা হলো না।” — [সূরা মায়েদা, আয়াত: ২৭]


🔹 কুরবানির সূচনা: হাবিল ও কাবিল

কুরবানির ইতিহাস শুরু হয় মানবজাতির সূচনালগ্নে। হযরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল প্রথম কুরবানি করেন। হাবিল তাঁর পালের সেরা দুম্বা আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানি করেছিলেন খাঁটি নিয়তে। কিন্তু কাবিল তার ফসলের নিকৃষ্ট অংশটি উৎসর্গ করেন। আল্লাহ তায়ালা হাবিলের কুরবানি কবুল করেন, কাবিলেরটি প্রত্যাখ্যান করেন।

👉 এই ঘটনা থেকে আমরা বুঝি, আল্লাহর কাছে কুরবানির আসল মূল্য হল নিয়তের বিশুদ্ধতা


🔹 হযরত ইবরাহীম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.)-এর আত্মত্যাগ

“হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদিষ্ট করা হয়েছে, তাই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।” — [সূরা সাফফাত, আয়াত: ১০২]

ইসলামি কুরবানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল ইবরাহীম (আ.)-এর ত্যাগ। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে স্বপ্নে আদেশ দেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কুরবানি করতে। ইবরাহীম (আ.) তাঁর বহু প্রতীক্ষিত পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে কুরবানি করতে রাজি হন। ইসমাঈল (আ.)-ও এই আদেশে রাজি হন।

👉 এই ঘটনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় কুরবানির সুন্নাহ, যা কেয়ামত পর্যন্ত মুসলিমরা পালন করবে।

“আমি তার পরিবর্তে যবেহ করার জন্য এক বিরাট পশু দিলাম।” — [সূরা সাফফাত, আয়াত: ১০৭]


🔹 কুরবানির তাৎপর্য ও ফজিলত

১. তাকওয়ার প্রকাশ: “এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে থাকে।” — [সূরা হজ, আয়াত: ৩৭]

২. সর্বোত্তম আমল: “কুরবানির দিনে পশু জবেহের চাইতে প্রিয় কোনো আমল নেই।” — [তিরমিজি, ইবনে মাজাহ]

৩. গুনাহ মাফ: “প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি সওয়াব।” — [মুসনাদে আহমদ]

৪. সুন্নাতে ইবরাহিমী: রাসূল (সা.) মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করে প্রতি বছর কুরবানি করেছেন। — [তিরমিজি]

৫. সামাজিক সহমর্মিতা: গোশত তিনভাগে ভাগ করে — নিজের জন্য, আত্মীয় ও প্রতিবেশী, এবং দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ।


🔹 কাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব?

কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য নিচের শর্তগুলো পূরণ হওয়া আবশ্যক:

✅ মুসলিম হওয়া ✅ প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ✅ মুকিম হওয়া (সফরে না থাকা) ✅ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া (সাড়ে ৫২ তোলা রূপার সমমূল্যের সম্পদ)

উল্লেখযোগ্য মাসআলা: পরিবারে যারাই নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, প্রত্যেকের উপর আলাদাভাবে কুরবানি ওয়াজিব।


 

কুরবানি কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি ত্যাগ, তাকওয়া, এবং আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। হযরত ইবরাহীম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.)-এর সেই মহান ত্যাগ আমাদের শেখায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবচেয়ে প্রিয় জিনিসও উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। এই ঈদুল আযহা হোক সেই আত্মসমর্পণের বাস্তব উপলব্ধি।

Scroll to Top